করোনা বা Covid19 শুধু একটা আতংকের নাম এখন। আমরা এতটাই আতংকিত যে, আমাদের মানবতা বোধটুকুও লোপ পেয়েছে। এমনকি প্রিয় জনের শেষ কৃতিতেও আমরা যেতে পারছি না বা চাচ্ছি না।
Covid19 কি, কেন হচ্ছে, হলে কি কি করা উচিৎ আমরা তা এখন সবাই জানি। কিন্তু কোথাও কি কোনো ভুল হচ্ছে, না না আমি চিকিৎসা ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক অবকাঠামো নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলছি না। কারন সকলেই তাদের সামর্থ অনুপাতে চেষ্টা করছে। একজন পুষ্টিবিদ হিসাবে আমার আলোচনার বিষয় আসলেই Covid19 হলে আক্রান্তদের কি কি খাওয়া উচিৎ।
নানা জনের অভিজ্ঞতা পড়ছি রোজ। দেখলাম তাদের খাদ্যাভ্যাস কি? কেও বলছেন প্রতিদিন একটা আস্ত মুরগি বা এর সুপ, ৭-৮ কাপ মশলা চা, সাথে রোজ এক লিটার দুধ, খেতে না চাইলেও আধা কেজি ফল খাচ্ছেন।
এতো কিছু?
আগেই বলে রাখছি করোনা বা Covid19 তে মুখে খাওয়া বা না খাওয়ার ব্যাপার আছে। আমি একটা সাধারণ আলোচনা করবো, চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো তাত্ত্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করবো না।
ফিরে যাই মূল আলোচনায়
তাহলে কিভাবে খাবেন?
Immune System তো স্ট্রং করতে হবে। কঠিন কিছু না।শুধু মাত্র প্রতিদিনের খাবারটাকে একটু গুছিয়ে নিন।
হাই প্রোটিন, ভিটামিন C, D, জিঙ্ক কিভাবে বুঝবো খাওয়া হচ্ছে ?
পটাসিয়ামও তো খুব জরুরি। High Protein মানেই আস্ত মুরগি খাবার দরকার নাই। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ১ টা ডিম, ২ পিছ মাছ অথবা মুরগি (এক্ষেত্রে Red Meat বাদ দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি ), আর বিকালে একবাটি সুপ খেলেই যথেষ্ট। যারা যে কোনো কারণে, শক্ত খাবার (Solid Food) একেবারেই খেতে পারছেন না তারা Liquid Form এ প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন। স্যুপ ২-৩ বার, সাথে Oats সাথে নুডুলস বা Rice ও মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে ২-৩ কাপ দুধও প্রোটিনের ভালো উৎস।

প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করতে চা এর জুড়ি নেই। আবার পটাসিয়ামের ভালো সোর্সও চা। চা প্রতিদিন ৩ কাপ খেলেই হবে। তবে দুধ ও চিনি যুক্ত চা না খেয়ে আদা, লেবু, দারুচিনি, লং, এলাচ, তেজপাতা দিয়ে তৈরি চা খান। চিনি না দিয়ে, মধু দিয়ে খেলে ভালো হয় তবে সে ক্ষেত্রে খুব গরম চা তে কিন্তু মধু মেশাবেন না, একটু ঠান্ডা করে তবেই মধু মেশান।
আচ্ছা কে বললো চিনি একদমই খাওয়া যাবে না!

অতিরিক্ত কোনো কিছু খাওয়াই খারাপ। তবে সারা দিন ১-২ চা চামচ চিনি খাওয়া যেতে পারে। চিনি শরীরে খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি দেয়। কিন্তু চিনি যুক্ত খাবার ঘন ঘন খাবেন না। তবে এ সময় চিনি একটু কমিয়ে খাওয়াই ভালো।
সে রকম লবনের ক্ষেত্রেও। বাড়তি লবন খাওয়ার দরকার নাই। তবে হ্যা শারীরিক দুর্বলতা যদি বেশি হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার স্যালাইন বা ORS খাবেন।
ফল তো মুখের স্বাদ বাড়ায়

ফল আপনার মুখের সাধ বাড়াবে। তাই রোজ খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ফল থাকা চাই। তবে আধা কেজি ফল খাবার দরকার নেই। প্রতিদিন মিষ্টি ফলের পাশাপাশি অবশ্যই টক ফল খাবেন, যা ভিটামিন সি এর উৎকৃষ্ট উৎস।
ভাত বা রুটি পরিমান মতো খান। খেতে ভালো লাগছে না তবে জাও ভাত , Oats, চিড়া, সুজি, সাগু খান ….ভালো লাগবে।
আচ্ছা ফুটন্ত গরম পানি খাওয়া কি ঠিক?
মোটেই না, অতিরিক্ত গরম কোনো খাবারই ঠিক না। তবে কেন খাচ্ছেন?

এ অবস্থায় কুসুম কুসুম গরম পানি খাবেন। কিন্তু ঠান্ডা পানি একদম না। রোজ ২ থেকে ৩ বার গরম পানি দিয়ে গর্গেল করবেন (সাথে লবণ মেশাতে পারেন) অথবা ভাপ নিবেন।
আমাদের শরীরটা কিন্তু একরকম কারখানা। খাবার খাওয়ার পর থেকে খাবারকে কাজে লাগানো থেকে শুরু করে বাড়তি বা অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেওয়াই এর কাজ। তাহলে কি করবো ?
শরীরের অমূল্য অংশ হলো কিডনি বা লিভার, যার কোনো কিছুকেই বাড়তি চাপ দেয়া যাবে না।

আরেকটা কথা, অবশ্যই প্রতিদিন ২০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। দীর্ঘদিন Isolation এ থেকে মানসিক ভাবেও আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি।

সেক্ষেত্রে নামাজ খুবই জরুরি। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের আরোগ্য লাভের আকুতি জানানো এক ধরণের মেডিটেশনো বটে। পরিশেষে বলতে চাই সবাই ভালো থাকুন। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করি। আমরাই তো পারবো, কি পারবো না ??
নাদিয়া হোসেন
পুষ্টিবিদ
পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
5 Comments