মেক্সিকোর অর্থনীতি – Mexico economy
মেক্সিকো পৃথিবীর ভেতর এমন একটি দেশ যেখানে সমৃদ্ধি, দারিদ্র্যতা, শহুরে উজ্জ্বলতা এবং প্রাকৃতিক জাঁকজমক কাঁধে কাঁধ রেখে হাটে যেখানে ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে ৩৩ টি দেশ রয়েছে, তার ভেতর দ্বিতীয় বৃহত্তম মেক্সিকোর অর্থনীতি – Mexico economy.
মেক্সিকোর জনসংখ্যা বর্তমানে ১২৬ মিলিয়নের কিছু বেশি। স্প্যানিশ তাদের প্রধান ভাষা। ২০২২ সালে, মেক্সিকোর ৮১.৩ ভাগ মানুষ শহরে বসবাস করতো। সেখানে শহরে মানুষের বসবাস করার বার্ষিক গড় বৃদ্ধি ০.৬২% । মেক্সিকোর আয়তন ৭,৫০,৫৬৩ বর্গ মাইল, যেখানে প্রতি মাইলে প্রায় ১৭৪ জন লোক বসবাস করে। সে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৫ বছর। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে বিবেচনায় রেখে ২০৬২ সালে ১৫৭ মিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Covid – ১৯ এরপর দেশটিতে জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে কারণ বিবাহের হার কমেছে মেক্সিকোর বর্তমান জন্মহার এক হাজার জনে ১৮.৩ জন এবং মৃত্যুর হার ৫.৮ জন। অন্যদিকে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা ১৯৯৪ সালের পর থেকে ২০২৩ সালে এসে চারগুণ বেড়েছে।
মেক্সিকোতে জাপোটেক, টলটেক, মায়া, ওমেকা, অ্যাজটেক, তারাহুমারা সহ বেশ কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে। মেক্সিকোর আদি জাতির নাম ওলমেক, অনুমান করা হয় ১২০০ থেকে ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তারা সে দেশে বসবাস করতো। তবে অনুমান করা হয় যে দশম শতাব্দীর প্রথম দিকে তারা কোনো পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে আত্মসমর্পণ করে। তবে বর্তমানে মেক্সিকোর মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ রোমান ক্যাথলিক ধর্ম পালন করে।
২০২২ সালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩১,১২৭ টি সহিংস হত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট থানাতে করা হয়েছিলো, যা প্রতিদিন ৮৬ টি। তবে এই সংখ্যাটি ২০১৯ ও ২০২০ সাল থেকে কম। সেই বছরগুলোতে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৯৫ ও ৯৪ টি। মেক্সিকান সরকারি কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, অপরাধ সংগঠনের প্রধান কারণ ছিল ড্রাগ।
মেক্সিকোতে প্রধানত নয়টি রাজনৈতিক দল আছে। এই নয়টি দলের নাম হচ্ছে ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টি, বিপ্লবী পার্টি, লেবার পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, নিউ অ্যালায়েন্স পার্টি, গ্রিন ইকোলজিক্যাল পার্টি, , ন্যাশনাল রিজেনারেশন মুভমেন্ট, সোশ্যাল এনকাউন্টার পার্টি এবং সিটিজেনস মুভমেন্ট পার্টি।
নাগরিক আইন পদ্ধতির মাধ্যমে মেক্সিকোর আইনী ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর জোর দেওয়া হয়। কিন্তু মেক্সিকোর দুর্বল বিচার ব্যাবস্থার কারণে দেশটির সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী ব্যাপক ভাবে কমে গেছে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে রাশ করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একটি সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালে প্রতি ১০ জনের ভেতর ৯ জন নাগরিক দুর্নীতি দেশের জন্য একটি সমস্যা বলে শিকার করে নিয়েছে।
১৯৯০ সালে মেক্সিকো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুরু করে এবং এর বাণিজ্য নীতিগুলো বিশ্বে সব থেকে উন্মুক্ত। সেখানে মোট ১১ টি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, ৪৬ টি দেশ এই চুক্তির সাথে জড়িত, তাদের মধ্যে আমেরিকা সব থেকে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যক অংশীদার। ২০২২ সালে মেক্সিকোর জিডিপি বৃদ্ধি ৩.১ শতাংশে পৌঁছেছে।
মেক্সিকো তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখছে, যা তাকে তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পৃথিবীতে স্থান তৈরী করে দিয়েছে। তাই সম্প্রতি তারা এ সেক্টরে আরও বেশি দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে। মেক্সিকোর অর্থনীতি – Mexico economy মূলত দেশীয় পণ্য দ্বারা ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত অর্থাৎ উৎপাদন মুখী অর্থনীতি, যা তাকে বিশ্বে ত্রয়োদশ বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। এই রফতানির ৮০ শতাংশ যায় আমেরিকাতে।
মেক্সিকো শিল্প অর্থনীতির সেক্টরগুলিতেও বেশ এগিয়ে আছে যার মধ্যে রয়েছে কৃষি, তেল, ইলেকট্রনিক্স এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন। প্রধান রপ্তানি কৃষি পণ্যের মধ্যে আছে ৩১ ভাগ সাইট্রাস এবং তরমুজ, ২৪ ভাগ টমেটো, ১৯ ভাগ আছে শসা এবং ২২ ভাগ গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যার ভেতর আছে আনারস, অ্যাভোকাডো, আম এবং পেয়ারা।
এদেশের প্রধান শিল্পগুলো হল খাদ্য ও পানীয়, রাসায়নিক, তামাক, লোহা ও ইস্পাত, পোশাক, পেট্রোলিয়াম, ভোক্তা, মোটর যান এবং পর্যটন।
মেক্সিকোর অর্থনীতি – Mexico economy মূলত স্থিতিশীল এবং মিশ্র অর্থনীতি। শুধু মাত্র মন্দা ব্যতীত ইতিহাসে প্রতি বছর তারা প্রবৃদ্ধি দেখেছে।
অন্য দিকে গ্রামীণ সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান কিছুটা কম বলে প্রতীয়মান হয়, সেই তুলনায় শহরের সরকারি স্কুলগুলির অবস্থা ভালো। তবে বেসরকারি স্কুলগুলিতে সাধারণত উচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। তাছাড়াও বিভিন্ন জাতীয়তার জন্য শহর অঞ্চলে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক স্কুল রয়েছে, যেগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই ভালো।
রোমান ক্যাথলিক অনুসারী মেক্সিকোতে সবথেকে বেশি। যার পরিমান মোট জনসংখ্যার ৮১ ভাগ। অন্য দিকে কয়েক হাজার মেক্সিকানের উপর চালানো এক জরিপে দেখা যায় যে ১০ ভাগ মানুষ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না এবং ০.৪ ভাগ মানুষ নিজেকে নাস্তিক বলে দাবি করে।
মেক্সিকোতে সম্পদ এর একটি অসম বন্টন রয়েছে , যেখানে দেখা যায় সারা বছরের মোট আয় এর ৪২ ভাগ মাত্র ১০ ভাগ ধনীদের আর বাকি অংশ সারা দেশের মানুষের।