সৌদি আরবের অর্থনীতি – Economy of Saudi Arabia
সৌদি আরব তুলনামূলক ভাবে একটি তরুণ দেশ, তবে সে দেশের একটি সমৃদ্ধশালী ইতিহাস রয়েছে। পশ্চিম দিকে আমরা দেখতে পায় উচ্চ ভূমি, দেশটি লোহিত সাগরের ধারে অবস্থিত। এখানে ইসলাম ধর্মের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনার অবস্থান। ১৯৬০ সালের পর থেকে প্রচুর তেল উত্তোলন করার সুযোগ সৌদিআরবে সৃষ্টি হয়। রিয়াদ দেশের রাজধানী, যেখানে ৭.৫৪ মিলিয়ন লোক বসবাস করে। সৌদি আরবের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর রিয়াদ । ২০২২ সালে সৌদি আরবে যত শহর আছে তার জনসংখ্যা প্রায় ৩০.৩৬ মিলিয়ন ছিল। ২১,৪৯,৬৯০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সৌদিয়া আরব এর অবস্থান, এখানে সম্পূর্ণ ভাবে রাজতন্ত্র চলে।
২০ শতকের শুরুর দিকে সৌদি পরিবার থেকে আল সা’উদ সে দেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরী করতে শুরু করেন। ওয়াহাবিজমের অনুপ্রেরণামূলক মতাদর্শের কারণে সৌদি ইসলামের একটি কঠোর রূপ ও আইনি পক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে থাকে এবং সেই সময় ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্মে মর্যাদা দেওয়া হয়।
২০২২ সালের শুরুর মাসে সৌদি আরবের জনসংখ্যার সংখ্যা জানা গিয়েছে ৩৫.৫৯ মিলিয়ন। বিভিন্ন ডাটা থেকে দেখা যায় জনসংখ্যা ২০২১ থেকে ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৫ শতাংশ, যেখানে ৪২.২ ভাগ নারী আর ৫৭.৮ ভাগ পুরুষ। ৮৪.৫ ভাগ মানুষ শহরে বসবাস করে। আয়তন অনুসারে প্রতি কিলোমিটারে ১৭ জন বাসিন্দা বসবাস করে।
সৌদিআরব এর প্রধান শহরগুলোর জনসংখ্যা হলো জেদ্দায় ৩,৪৩,০৭০; মক্কাতে আছে ১৫,৩৪,৮০০ এবং মদিনার জনসংখ্যা ১১,০০,১০০। তাছাড়াও আদ-দাম্মাম ৯,০৩,৪০০, হোফুফ ৬,৬০,৮০০, তায়েফ ৫,৮০,০০০ এবং তাবুকে ৫,১২,৭০০।
মোট জনসংখ্যার ৬২ ভাগ সৌদিয়ান, বাকি প্রায় ৩৮ ভাগ বিভিণ্ণ দেশের মানুষ, যার অধিকাংশই আফ্রো-এশীয়। আরবি রাষ্ট্রের সরকারী ভাষা তবুও ইংরেজি একটি ব্যবসায়িক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাই ব্যাবসায়িক চুক্তি গুলো আরবি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রচলিত। দেশের শাসক পরিবার সহ অধিকাংশ মানুষ সুন্নি মুসলমান তবে শিয়া সংখ্যালঘু মুসলিমদেরকেও দেখা যায়। সৌদি আরব এর মানুষ কঠোর ইসলামিক বিধি নিষেদ মেনেও শিক্ষাকে এগিয়ে রেখেছে, যে কারণে তাদের শিক্ষার হার ৮২.৯%।
২০২১ সালে সৌদি আরবে পণ্য আমদানি করা হয় ১,৫২,৮৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা আগের বছর থেকে ১৪, ৮৫২ মিলিয়ন কম। পণ্য রপ্তানি করা হয় ২,৭৬, ১৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের, ২০২০ সালে যার পরিমান ছিল ১,৩৭,৯৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস বা সেবা আমদানি করার পরিমান যথাক্রমে ছিল ৭৩,২৮১ এবং ৩৮,২০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সেবা রপ্তানি করে অর্জিত ডলারের পরিমান ছিল ১০,৩০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত বছর থেকে কিছু বেশি।
সৌদি নাগরিকরা ইসলামী আইন দ্বারা পরিচালিত ২.৫ শতাংশ ধর্মীয় কর প্রদান করে। তাছাড়াও অন্যান্য করের সাথে মূল্য সংযোজন করও অন্তর্ভুক্ত। সামগ্রিক করের বোঝা মোট দেশীয় আয়ের ৮.৯ শতাংশের সমান। গত তিন বছরে, সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড় ৩৫.২ শতাংশ এবং বাজেট ঘাটতি জিডিপির গড় ৬.৫ শতাংশ এবং সরকারি ঋণ জিডিপির ২২.৮ শতাংশের সমান।
কোভিড-১৯ এর আক্রমণ সত্ত্বেও সৌদি আরবের অবকাঠামোগত কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা স্কোর মধ্যম মানের, যা বর্তমানে ৬৬.০০ এটি ২০২১ সাল থেকে ৩.০০ বেড়েছে। যে কারণে সৌদি আরব উত্তর আফ্রিকার ১৪টি দেশ ও মধ্যপ্রাচ্য এর মধ্যে ৫ম স্থানে রয়েছে। সৌদি অর্থনীতি / Economy of Saudi Arabia ২০২২ সালে মাঝারিভাবে উদার হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি সরকারের নাটকীয়ভাবে কিছু নীতি পরিবর্তন করার জন্য রাষ্টের আর্থিক অবস্থার অভূতপূর্ণ উন্নতি হয়েছে। তবে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও ঘাটতি রোধ করতে আরো অনেক পথ এগিয়ে যেতে হবে। বিনিয়োগ এর জন্য উদারীকরণ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধিতে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
সেক্টর অনুযায়ী অর্থনীতিতে ভূমিকা
তেল ও গ্যাস শিল্প
২০১৯ সালের শেষের দিকে সৌদিতে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ছিল ৬.৯ m BPD এবং ২০২০ সালে এসে সে পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯.৫ m BPD। এখনো জ্বালানি খাত এ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বিবেচনা করা হয়। দেশের মোট রফতানি আয় এর ৭৭.৩ ভাগ এই খাতের দখলে ছিল, যা ২০১৯ সালের মোট জিডিপির ২৭.৪ ভাগ। যদিও কোভিড – ১৯ এর বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী শক্তির চাহিদা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।
রিয়েল এস্টেট
রিয়েল এস্টেট বাজারে সরকারের এতো বেশি রূপান্তরমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আর কোথাও লক্ষ করা যায় না। গত ১ বছরের উপাত্ত খেয়াল করলে এটি খুঁজে পাওয়া যায় যে, রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ প্রায় ২৮১ ভাগ বেড়ে গেছে। এতে করে দেশে প্রায় ৩০,০০০ নতুন চাকুরীর বাজার সৃষ্টি হয়েছিলো।
শিল্প খাত
সৌদি আরবের শিল্প খাতের দ্রুত বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতন, সৌদি অথরিটি ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটিস অ্যান্ড টেকনোলজি জোনের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় ২০০ মিলিয়ন বর্গ মিটারেরও বেশি জমিতে ৩৬ টি শিল্প শহর উন্নত করা ও সঠিক ভাবে পরিচালনা, নতুন পণ্য এবং সেবা প্রদান করা শুরু করার পর থেকে অর্থনীতিতে একটি ধনাত্মক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শেষ কথা
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে কোভিড-১৯ এর জন্য যখন পৃথিবী বিপর্যস্থ, তখন সৌদি আরবের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে।