এখানে লক্ষণীয় যে বেশিরভাগ বৃদ্ধি জনিত অক্ষমতা একটি শিশুর জন্মের আগেই শুরু হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে কোনো বাহ্যিক আঘাত, কোনো অসুখের জন্য বা অন্যান্য কারণে জন্মের পরেও এই বিষয়টি একজন মানুষের ভেতর দেখা দিতে পারে।
আমাদের সকলের উচিৎ তাদের প্রতি সদয় হওয়া, তাদের সাথে ভালো কথা বলা। তাদেরকে বেশি বেশি সময় দেওয়া। তাদেরকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন। বর্তমানে কক্সবাজারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য অনেক ধরণের সুযোগ-সুবিধা তৈরী করা হয়েছে। আপনি সে সুযোগটি নিতে পারেন।
শিশুদের মাঝে আমরা যে ধরণের প্রতিবন্ধিতা দেখতে পায় তার মধ্যে রয়েছে বুদ্ধি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধিতা। সঠিক সময়ে হাটতে অপারগতাও এক প্রকার শারীরিক প্রতিবন্ধীতা। চোখে না দেখা, কথা বলতে না পারা অথবা, আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার অক্ষমতাকেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধকতা বলে। বাংলাদেশে ২০২২ সালে প্রতিবন্ধীর হার ছিল ৯.০৭ শতাংশ। ইউনিসেফের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন শিশু প্রতিবন্ধী। অর্থাৎ প্রতিদিন যে কয়টি শিশু জন্মগ্রহণ করে তার ভেতর প্রতি দশজন শিশুর একজন প্রতিবন্ধী। তারা আরো বলে যে প্রতি দুই জন শিশুর ভেতর একজন শিশুর চিকিৎসা করার সামর্থ নাই। তবে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে আমরা অটিজম শিশু জন্মগ্রহণ করার কারণ জানি না।
যে সকল কারণে এই সমস্যাটি মানুষের ভেতর দেখা যায়
সাধারণ গর্ভাবস্থায় পিতামাতার আচরণগত সমস্যা, যেমন ধূমপান এবং মদ্যপান। অন্যদিকে একজন মা গর্ভাবস্থায় যে কোনো রকম সংক্রমনের শিকার হতে পারে বা এমনটি যদি শিশুটির ক্ষেত্রেও ঘটে, মা বা শিশু যদি উচ্চ মাত্রার পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তবে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সাইটোমেগালোভাইরাস (CMV) যা মায়েদের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ২৫ ভাগ শিশু মায়ের এই সমস্যা থেকে কানে কম শুনতে পায়।
আমাদের দেশে কিছু মানুষ অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে করে আবার অনেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে অনেক বেশি বয়সে মা হবার মতন ঝুঁকি গ্রহণ করে। ডাক্তারদের মতে এই দুটি সময়ই মা হবার জন্য ঝুঁকি পূর্ণ। সাধারণত যে সকল মায়েরা ৩৫ বছর বয়সে প্রথম মা হয়, তাদের শিশুদের শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করার হার বেশি।
আমাদের অনেকের ভেতর এই বিষয়টি দেখা যায়, শারীরিক সামান্য সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নানা ধরণের ঔষধ খেয়ে থাকি। গর্ভাবস্থায় এই বিষয়টি একটি শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
নবজাতকের জন্ডিস একটি বড় সমস্যা। জন্মের পর প্রথম দিকে শিশুর রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যদি বেশি হয় তবে মস্তিষ্ক এর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা কার্নিক্টেরাস নামে পরিচিত। কার্নিক্টেরাস আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি, শ্রবণ ও দৃষ্টি সমস্যা এবং দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের অনেকেই রক্তাল্পতায় ভোগেন, তাছাড়াও যথেষ্ট পরিমান পুষ্টিকর খাবার খান না, যে কারণে ভ্রুনের ভেতর বিভিন্ন জটিল অঙ্গগুলো সঠিক ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে না ফলে শিশু বিকলাঙ্গ অথবা প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলাদেশে শুধু মাত্র এই কারণে ৩৭ শতাংশ নবজাতক ওজন কম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যার মধ্যে ৫০ ভাগ জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়াও নির্দিষ্ট সময়য়ের আগেই জন্ম এবং একাধিক জন্ম বিকাশজনিত অক্ষমতা অনেক সময় দায়ী হয়।
রক্তে RH উপাদান এর উপস্থিতি একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। মা বাবার ভেতর, মায়ের যদি RH পজেটিভ হয় আর অন্যদিকে বাবার যদি RH নেগেটিভ রিপোর্ট আসে তবে শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে শিশুর জন্মগ্রহণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ফরমালিন দেয়া কোনো খাবার মায়েরা যদি গর্ভওবস্থায় গ্রহণ করে থাকে তবে শারীরিক অক্ষমতা জনিত সমস্যা যুক্ত শিশু জন্ম নিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ঘণ ঘণ খিঁচুনি, মায়ের শরীরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রবেশ (বিশেষত প্রথম তিন মাসের ভেতরে এক্স-রে বা অন্য কোনো ভাবে মায়ের দেহে যদি তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রবেশ) সেক্ষেত্রেও শিশু শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।
# তথ্যসূত্র
Zablotsky B, Black LI, Maenner MJ, Schieve LA, Danielson ML, Bitsko RH, Blumberg SJ, Kogan MD, Boyle CA। পেডিয়াট্রিক্স। 2019; 144(4):e20190811।
https://medivoicebd.com/article/25417