জীবনযাপন

ছাত্র জীবনে ফেসবুক ব্যবহারের খারাপ ও ভাল প্রভাব

ছাত্র জীবনে ফেসবুক ব্যবহারের খারাপ ও ভাল প্রভাব

 

ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে দুইটি ঘটনা বলি। এই মাত্র মেরিনার চাকুরীটা চলে গেল। আর অন্য দিকে বাবুর বিসনেস শেষ হতে হতে, শেষ  হয়ে গেল।

আপনি নিশ্চই ভাবছেন কেন দুজনের এই অবস্থা ?

মেরিনার প্রতিদিনের চাকুরীর কাল ৯ ঘন্টা, সেখানে ওই সময়টার ভেতরে ২/৩ ঘন্টা সে একটি বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকতো।  বাবুও তার বিজনেস এর মাঝখানে বেশ কিছু সময় একটি বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকতো। আরো বলে রাখি, তাদের বিশেষ কাজটি তাদের পেশার জন্য কোনো প্রয়োজন ছিল না।

অন্য দিকে একজন ছাত্র সেও তার স্টাডির সময় নষ্ট করে ওই একই কাজ করতো প্রতিদিন।

ওই বিশেষ কাজের জন্য, মেরিনা ও বাবুর জীবনে দুর্দশা শুরু হয়ে ছিল। কারণ তাদের কাজের সময়কে তারা নষ্ট করতো। এখন আসি, ওই বিশেষ কাজটি কি ?

খারাপ প্রভাব:
হ্যা, ওই সময়টা তারা দুজন ফেসবুকে অতিবাহিত করতো।  তারা যদি ফেসবুকে আসক্ত না হয়ে, শুধু মাত্র অবসর সময়ে ওই কাজটি করতো তবে তাদের এই দূরদশা হতো না।

সামাজিক ভাবে ফেসবুকের প্রভাব:

ফেসবুক একটি অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যা সারা পৃথিবীর মানুষদেরকে এক কাতারে এনে ফেলেছে। আর খুব সহজেই পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের সম্পর্ক তৈরী করতে সাহায্য করেছে। ২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গ এটি চালু করেন, যা খুব দ্রুত আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীতে প্রতিটি সৃষ্টির ভালো ও খারাপ দিক থাকে। তবে সেটি সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করে ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গীর উপর। প্রতি মাসের প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারির মধ্যে অধিকাংশই ছাত্র। সেই জন্য, আমরা আলোচনা করবো ছাত্র জীবনে ফেসবুকের খারাপ প্রভাব নিয়ে।

যাই হোক সবাইতো তার কর্মফল ভোগ করলো, কিন্তু ছাত্রের কি হবে ?   হ্যা, ছাত্রের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ আসলো। সেও তার ক্লাসে স্যারের কথা না শুনে অথবা পড়ার সময় নষ্ট করে ফেসবুকে বসে থাকতো। আরো অনেক ভালো মন্দের ভেতর এটাই ছাত্র জীবনে ফেইসবুক এর খারাপ প্রভাব।

কিছু ভালো প্রভাবও আছে ফেসবুকের:

এটি সহপাঠীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, তাদের কোর্স সম্পর্কে একে অপরের সাথে পরামর্শ করা, স্যারের বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার গুলি আলোচনা ছাড়াও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে পাওয়া যায়। অন্য দিকে তাদের নিদিষ্ট শ্রেণীর গ্রূপ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য, চাকরী এবং ইন্টার্নশিপের খবর ও আবেদন করতে পারে। আজকের দিনে ফেইসবুক ব্যবহার না করলে কোনো ভাবেই আগানো সহজ হয়ে উঠে না।

ছাত্র জীবনে ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে গবেষণার ফল :

সারা পৃথিবীতে ছাত্র জীবনে ফেইসবুক এর খারাপ প্রভাব নিয়ে হাজার হাজার রিসার্চ হয়েছে। এই রিসার্চ গুলো থেকে আমরা যা জানতে পেরেছি তা খুবই হতাশ দায়ক। আসুন তা একটু দেখি।

ফেসবুকের প্রভাব নিয়ে গবেষণা:

দেখা যায় যে:

১. ১০০ জনে ৫২% শিক্ষার্থী প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ফেসবুকে সময় অতিবাহিত করে, ২৯% প্রতিদিন ৩-৫ ঘন্টা ব্যবহার করে এবং ১০% অল্প সময় ফেসবুকে থাকে।

২. পড়াশুনার জন্য মাত্র আধা ঘন্টার কম সময় ব্যয় করে ৭৫% এবং অন্যরা ১-২ ঘন্টা ব্যয় করেছেন।

ফেসবুককে যে যে উদ্দেশে ব্যবহার করা:

ছাত্ররা যে উদ্দেশ্যে ফেসবুক ব্যবহার করে তার ভেতর শিক্ষার উদ্দেশে খুব কম।

১. বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখতে   ৩০%

২. ফটো বা ভিডিও দেখতে ১১%

৩. খেলাধুলা করতে ৫%

৪. চ্যাট করতে ২২%

৫. অ্যাপ্লিকেশন গুলো ব্যবহার করতে ৭%

৬. মেসেজিং করতে ১৩%

৭. ফ্যাকাল্টির সাথে যোগাযোগ রাখতে ৬%

৮. গ্রূপ স্টাডি করতে ৬%

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফেসবুক ব্যবহার করছে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে আর গেমস খেলতে, অনুষদের সাথে যোগাযোগ ও একাডেমিক আলোচনার জন্য খুব কম শিক্ষার্থীরা ফেসবুককে পছন্দ করে।

জীবনে ফেসবুকের প্রভাবে কি হচ্ছে:

অবশেষে প্রায় ৭৮% শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্বীকার করে যে অতিরিক্ত ফেইসবুক ব্যবহারের ফলে তাদের রেজাল্ট ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে।

তা ছাড়াও, ছাত্ররা আরো বলেন যে, ছাত্র জীবনে ফেসবুকের এই খারাপ আসক্তি আসার আগে তারা অনেক সামাজিক ছিল, তাদের অনেক বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের  সাথে শারীরিক ভাবে দেখা হতো, কিন্তু এখন আর হয় না।  তাদের মন মাঝে মাঝে পুনরায় সেখানে ফিরে যেতে চায়।

বিজ্ঞানীদের মতে ফেসবুকের প্রভাব গুলো :

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, ফেইসবুক নেশার ফলে শিক্ষার্থীরা  আরও হতাশাগ্রস্ত এবং  একাকী বোধ করতে শুরু করে।  তা ছাড়াও সামাজিক ও শারীরিক ভাবেও নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। সকল সমস্যার সাথে ছাত্রদের শিক্ষার গ্রেডও কমতে থাকে।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে, এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ” nea “ তে দেখতে পারেন।

সামাজিক মিডিয়া আসক্তি ও এর প্রভাব সম্পর্কে সাইবার সাইকোলজিতে আপনি আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের উচশিক্ষার সুযোগ সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের এই লিংকে ক্লিক করে দেখতে পারেন।

সর্বোপরি, শুধু ফেসবুকেই যে এই সমস্যা তা না, যে কোনো ধরণের নেশায় আমাদের সমাজে আমাদের সন্তানদেরকে ধ্বংস করছে তাই ওই সকল পরিষেবার খারাপ ও ভালো দিকের প্রতি সচেতন হতে হবে

 

2 Comments

  1. You could definitely see your enthusiasm within the work you
    write. The arena hopes for even more passionate writers such as
    you who are not afraid to say how they believe.

    All the time go after your heart.

  2. I’m not sure where you are getting your information, but great topic. I needs to spend some time learning much more or understanding more. Thanks for excellent information I was looking for this info for my mission.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button