বাংলাদেশ

নকশি কাঁথার ইতিহাস

নকশি কাঁথার ইতিহাস

নারীর কমল ও সূক্ষ্ণ হাতের ছোয়ায় সুচ আর বিভিন্ন রংয়ের সুতায় বোনা কাঁথাই নকশি কাঁথা। অনেকসময় কাঁথাতে কোনো রকম ডিসাইন না এঁকেই নারী তার মনের অনুভূতি গুলো সুই সূতা দিয়ে বুনে ফেলে। এই কাঁথাগুলোর বৈশিষ্ট হচ্ছে, “ভিন্নতা”। অর্থাৎ প্রত্যেক সৃষ্টিই ইউনিক হয়ে থাকে।

নকশি কাঁথার দিনকাল

বর্তমানে সৌখিন ও বিলাসী মানুষদের কাছে নকশি কাঁথা এক ঐতিহ্যের নাম। আর পরিবারে নতুন অতিথির জন্যতো কথাই নেই। সমাজের উঁচুতালা থেকে নিচুতালা পর্যন্ত সকল স্তরেই এর সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশেষত মানুষ এখন অনেকটা শখের বসেই এটিকে ঘরে রাখতে পছন্দ করে। এখন অবশ্য দেশ থেকে দেশের বাহিরে এর কদর খুব বেশি। দেশের বাহিরের পরিবার গুলো দেশের গন্ধ বুকে ধরে রাখতে আগলে রাখে এই কাঁথা।

প্রকারভেদ

আসলে ভিন্নতা চলে আসে ব্যবহারের উপর। যেমন আসন কাঁথা, জায়নামাজ কাঁথা, দস্তরখানা, বয়তন, লেপকাঁথা ইত্যাদি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের সুই দিয়ে নকশি কাঁথা তৈরি শুরু হয়েছে যদিও একসময় শুধুমাত্র রেশমি সুতা ও সোনামুখী সুই দিয়েই কাঁথা বোনা হতো।

ব্রিটিশ আমলে

 ব্রিটিশ আমলের আগে বাড়ির মেয়েরা বছরের পর বছর ধরে একটি কাঁথা তৈরী করতো। সেই আমলে কিছু উর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তা প্রথম অর্ডার দিয়ে নানা রকমের নকশি কাঁথা বানিয়ে নিতে থাকে। আসলে মসলিন কাপড় যেমন বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও হতো না এটিও তেমন। এটি বাংলাদেশের নিজেস্ব একটি সৃষ্টি যা এই দেশের মা-খালারা তৈরী করতো। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করার পর তাদের একটি প্রধান আকর্ষণ ছিল সোনারগাঁওয়ের মসলিন ও সারা বাংলার অনবদ্ধ সৃষ্টি এই কাঁথার উপর। মসলিনকে চিরতরে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিতে পারলেও, মুছতে পারে নাই আমাদের নকশি কাঁথাকে। ১৯৭২ সালে কারিকা ও পরে ব্র্যাক বাণিজ্যিক ভাবে দেশে-বিদেশে বিক্রি শুরু করে। বর্তমানে আরো বহু প্রতিষ্ঠান এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এগিয়ে এসেছে।

কি কি তৈরি করা যায়

বর্তমানে আমাদের দেশে নকশি কাঁথা সেলাই এর বিভিন্ন ধরণের পণ্য দেখতে পাওয়া যায়। যার ভেতর অন্যতম হলো থ্রি-পিস, বেড কভার, কুশন কভার, ওয়ালমেট, শাড়ি, ছেলে-মেয়েদের পাঞ্জাবি, ব্যাগ, কলমদানি, কানের দুল, গলার মালা ইত্যাদি। এ সব ছাড়াও আমাদের সৃষ্টিশীল শিল্পীরা এই মাধ্যমে আরো কি সৃষ্টি করা যায় তার উপর ব্যাপক গবেষণা করছে। আর প্রতি নিয়তই তারা নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।

কোথায় কোথায় উৎপাদন হয়

প্রায় সারা দেশেই বিচ্ছিন্ন ভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে বেশি হয় ফরিদপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, জামালপুরের বকশীগঞ্জএ। তবে জামালপুরের প্রায় ৩৫০ টি প্রতিষ্ঠান এই শিল্পে উৎপাদনে দেশের ভেতর একটু বেশি এগিয়ে আছে।

উন্নত বিশ্বের বাজার

ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও সারা বিশ্বে আমাদের এর বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। যা আপনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইটগুলোতে চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন। উন্নত মান ও দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়াতে এর চাহিদা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নকশি কাঁথা কোথায় পাবো

বর্তমানে ব্যাক্তি পর্যায়ে শহর ও গ্রামের গৃহিণীরা পরিবারের সকল কাজ শেষে নকশি কাঁথা বোনা শুরু করেছে। যা তারা সাধারণত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাক্তিগত ভাবে বিক্রি করে থাকে। তা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন শপিংমলে পাওয়া যায়।

বর্তমানে দেশের অসংখ্য মানুষ এই ব্যাবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন ব্যবসা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটের এই লিংকে যান।

বিস্তারিত আরো কিছু জানতে এই লিংকে উকিপেডিয়াতে দেখুন।

 

Kollol Khan

My professional background includes research and writing in the field of business.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button